ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

মাতামুহুরীর পালাকাটা রাবার ড্যাম মেরামত শেষ, ৬০ হাজার একর জমিতে হবে চাষাবাদ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চারমাস আগে ডিসেম্বরের শেষের দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের ড্যামটির তিন নম্বর স্প্যানের রাবার দেবে গিয়ে নদীতে ধরে রাখা উজানের মিঠাপানি ভাটির দিকে নেমে যেতে থাকে। এতে নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৬০ হাজার একর জমিতে। এ নিয়ে কৃষককুলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক আর উদ্বেগ।

রাবার ড্যামটির এমন দৈনদশার ঘটনাটি জানতে পেরে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম ও পাউবো কঙবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। পরবর্তীতে এমপির তাৎক্ষনিক নির্দেশে অকার্যকর হয়ে পড়া রাবার ড্যামটি মেরামতের উদ্যোগ নেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান বলেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাবার ড্যামের উপরে-নীচের অংশে মাতামুহুরী নদীতে মাটি ফেলে শুরু করা হয় দুইটি অস্থায়ী মাটির ক্রসবাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম।

তিনি বলেন, ১৫ দিনের ব্যবধানে রাবার ড্যামের উপরে-নীচের অংশে দুইটি মাটির তৈরী অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়। এরপর শুরু করা হয় ড্যামের তিন স্প্যানের মধ্যে ফুটো (ছিদ্র) হওয়া স্প্যানের রাবার মেরামতের কাজ। টানা চারমাস নির্মাণ কাজ শেষে ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়ে রাবার ড্যামের মেরামত কাজ।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী প্রকল্পের অধীনে পালাকাটা রাবার ড্যামের পাশে মাটি ফেলে দুটি অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণ ও পরবর্তী সময়ে ড্যামের মেরামত কাজটি সমাপ্তে কাজ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ।

শুক্রবার ( ১ মে) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় চারমাস পর মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যাম মেরামত কাজ সমাপ্তির মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কার্যক্রম বুঝিয়ে দিয়েছেন। মেরামত কাজ সমাপ্তির পর এদিন প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করেছেন পাউবো কঙবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ তাজুল ইসলাম, উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) শাহ আরমান সালমান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাফর আলম সিআইপি, ড্যামের কেয়ারটেকার আবদুর রহিম, জালাল উদ্দিন মানিক প্রমুখ।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড অকার্যকর হয়ে পড়া পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি মেরামতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করেছেন। যথাসময়ে ড্যামটি মেরামত হওয়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চলতি মৌসুমে নদীর মিঠা পানির সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদে সুফল পাবেন কৃষকেরা।

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে সর্বপ্রথম মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে দুইটি ক্রসবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) তৈরি করে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাটির বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ হয়ে আসছিলেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর দুইটি ক্রসঁবাধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় অনুমোদন দেন মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি স্থায়ী রাবার ড্যাম নির্মাণে।

মুলত ২০০৯ সালের পর থেকে রাবার ড্যামের মাধ্যমে নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে নির্বিগ্নে চাষাবাদ করে আসছিলেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কৃষকরা। তবে মাঝে মধ্যে ড্যাম দুটিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিলে রিপিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সচল করে আসছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এমপি জাফর আলম বলেন, অনুরূপভাবে গত ডিসেম্বরে পালাকাটা পয়েন্টের পয়েন্টের ড্যামটির তিন নম্বর স্প্যানের রাবার দেবে গিয়ে নদীতে ধরে রাখা উজানের মিঠাপানি ভাটির দিকে নেমে যেতে থাকে। এতে নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার কৃষককুলে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক আর উদ্বেগ।

পাউবো কঙবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, রাবার ড্যামের এমন দৈনদশার ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরির্দশন শেষে অকার্যকর হয়ে পড়া রাবার ড্যাম মেরামতে উদ্যোগ নিই। বিষয়টির আলোকে অর্থবরাদ্দ চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন প্রশাসনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। যদিও এখনো অর্থবরাদ্দ হয়নি, তারপরও স্থানীয় এমপির সার্বিক সহযোগিতায় পাউবো’র অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে মেরামত কাজ শেষে অবশেষে সচল করা হয়েছে পালাকাটা রাবার ড্যামটি। #

পাঠকের মতামত: